Golden Bangladesh
নোয়াখালী জেলা

[গোল্ডেন বাংলাদেশ দেশের 64 জেলার ইতিহাস সহ প্রত্যেক জেলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করতে বদ্ধ পরিকর। তাই প্রত্যেক জেলার সদস্যদের নিজ জেলার তথ্য আপলোড করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। তথ্য আপলোড কারীর নাম তথ্যসূত্রে উল্লেখ করা হবে। তাই দেরি না করে নিজ জেলার গৌরবময় ইতিহাস সংযোজন করে সাইটটিকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।]   

নামকরণের ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরা-র পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়া-র উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় "নোয়া (নতুন) খাল" বলা হত, এর ফলে "ভুলুয়া" নামটি একসময়ে পরিবর্তিত হয়ে ১৬৬৮ সালে হয়ে যায় "নোয়াখালী"।

ইতিহাস

নোয়াখালী জেলার মর্যাদা পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক এদেশে জেলা প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় থেকেই। ১৭৭২ সালে কোম্পানীর গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এদেশে প্রথম আধুনিক জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা নেন। তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ১৯টি জেলায় বিভক্ত করে প্রতি জেলায় একজন করে কালেক্টর নিয়োগ করেন। এ ১৯টি জেলার একটি ছিল কলিন্দা। এ জেলাটি গঠিত হয়েছিল মূলতঃ নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে। কিন্ত ১৭৭৩ সালে জেলা প্রথা প্রত্যাহার করা হয় এবং প্রদেশ প্রথা প্রবর্তন করে জেলাগুলোকে করা হয় প্রদেশের অধীনস্থ অফিস। ১৭৮৭ সালে পুনরায় জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় এবং এবার সমগ্র বাংলাদেশকে ১৪টি জেলায় ভাগ করা হয়। এ ১৪ টির মধ্যেও ভুলুয়া নামে নোয়াখালী অঞ্চলে একটি জেলা ছিল। পরে ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা নামে একটি নতুন জেলা সৃষ্টি করে ভুলুয়াকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে নোয়াখালী জেলা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী মহকুমা নিয়ে নোয়াখালী জেলা গঠিত হয়। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত একটি বিশাল জেলা হিসেবে পরিচালনা হয়ে আসছিল। ১৯৮৩ সালে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হলে লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা আলাদা হয়ে যায়। শুধুমাত্র নোয়াখালী মহকুমা নিয়ে নোয়াখালী জেলা পুনর্গঠিত হয়। তখন এ জেলায় উপজেলা ছিল ছয়টি। পরবর্তীতে আরো তিনটি উপজেলার সৃষ্টি করা হয়। এবং বর্তমানে জেলায় মোট উপজেলার সংখ্যা নয়টি। জেলার একটি বিশেষত্ব হলো আটটি উপজেলা মূল ভূখন্ডের সাথে রয়েছে। আর হাতিয়া নামক উপজেলাটির কিছু অংশ জেলার মূল ভূখন্ডের সাথে সংযুক্ত থাকলে ও বৃহত্তর অংশ (মূল হাতিয়া) এর চর্তুদিকে মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা।

নোয়াখালীর ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০ সালে নোয়াখালীর জনগণের জিহাদ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯২০ সালের খিলাফত আন্দোলন। জাতিগত সংঘাত ও রায়টের পর ১৯৪৬ সালে মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা ভ্রমণ করেন। বর্তমান বেগমগঞ্জ উপজেলার জয়াগ নামক স্থানে গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম রয়েছে, যা "গান্ধী আশ্রম" নামে পরিচিত।

১৭৯০ সালের পর হতে নোয়াখালী জেলা বহুবার ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোন ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পতিত হয়। ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে নোয়াখালী জেলার অনেকে ছিলেন। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নোয়াখালীর মাটি রঞ্জিত হয়ে আছে। ১৫ই জুন, ১৯৭১ সালে সোনাপুর আহমদীয়া স্কুলের সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী বেগমগঞ্জ থানার গোপালপুরে গণহত্যা চালায়। নিহত হন প্রায় ৫০ জন নিরস্ত্র মানুষ। নোয়াখালী জেলা স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। [চলবে....]

তথ্যসূত্র : http://bn.wikipedia.org