Golden Bangladesh
জয়পুরহাট জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থান সমূহ

জয়পুরহাট জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থান সমূহ :

 আছরাঙ্গা দিঘী

জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নে অবসিহত । এর মোট আয়তন ২৫.৫০ একর । ধারণা করা হয় প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১০৭০ ফুট প্রসহ বিশিষ্ট এ দিঘী খনন করা হয়। অনেকের মতে তাহিরপুর রাজ পরিবারের সদস্য মনু ভূট্ট এ দিঘী খনন করেন । ১৯৯২ সালে এ দিঘীটি পুনরায় খনন করা হয় । এ দিঘীটি খনন কালে ১২ টি মূর্তি পাওয়া যায় যা বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে । বর্তমানের দিঘীটির চর্তুদিকে পাড়ে একটি পাকা রাস্তা করার কাজ চলছে । দিঘীটির চারিদিকে অসংখ্য গাছ-পালা এবং দিঘীটির স্বচ্ছ পানি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দযের র্সৃষ্টি করেছে যা সকলকে আকৃষ্ট করে । প্রতি বছর অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসুর এখানে আগমন ঘটে ।

নান্দাইল দিঘী

ঐতিহাসিক নান্দাইল দিঘীটি জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেধীন পুনট ইউনিয়নে অবসিহত । ইহা অনেক বড় এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ কিঃ মিঃ । কথিত আছে রাজা নন্দলাল ১৬১০ সালে এই ঐতিহাসিক নান্দাইল দিঘীটি খনন করেন । দিঘীটির আয়তন ৫৯.৪০ একর । সহানীয় জনগণের মতে দিঘীটি এক রাতের মধ্যে খনন করা হয়েছে । এক সময়ে দিঘীটির পাড় অনেক উঁচু ছিল । শীত কালে দিঘীটিতে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারনে বর্তমানে দিঘীটি পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে । বর্তমানে দিঘীটির পাড়ে নান্দাইল নামক একটি কলেজ সহাপিত হয়েছে ।

লকমা রাজবাড়ি 

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম কড়িয়া গ্রামে ঐতিহাসিক লকমা রাজবাড়ি অবসিহত।   বাড়িটিতে বর্তমানে লকমা চৌধুরীর পরনাতীসহ উত্তরাধিকারী ও সহায়ী বাসিন্দা সমন্বয়ে ৪২ জন সদস্য সমিতি করে দেখাশুনা করেন । লকমা চৌধুরীর পরনাতী জানান, প্রায় ২০০-৩০০ বছর পূর্বে  বাড়িটি নিমার্ণ হয়  এবং বর্তমানে এখানে প্রায় ১৫ বিঘা জমি আছে । উক্ত জমিতে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি ফল ও ফুলের বাগান দেখা যায় ।সহানীয় লোকজন জানান, দালান দুটির একটি  ঘোড়াশাল এবং অপরটি হাতীশাল ছিল । তার একটু সামনে মাটির একটি ঢিবি রয়েছে   সেখানে  ইউ আকৃতির বহু পুরাতন দ্বিতল ভবনের অবসহান । জনশ্রুতি আছে যে, ভবনের কিছুটা অংশ মাটির নীচে ডেবে গেছে । লকমা চৌধুরীর বাড়ীর পূর্ব পার্শ্বে কর্মচারীর ঘর ও কবরসহান রয়েছে। বর্তমানে রাজবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হতে চলেছে । এখনও প্রতিদিন অনেক লোক স্বচক্ষে রাজবাড়ীঢি দেখার জন্য আসেন।

পাথরঘাটা

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলা সদর হতে ৫ কিঃ মিঃ পূর্বে তুলশীগঙ্গা নদীর পশ্চিম পার্শ্বে প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষপূর্ণ এলাকার নাম পাথরঘাটা । নদী পরিবেষ্টিত পাথরঘাটা সহানীয়ভাবে কসবা উচাই ও মহীপুর নামে পরিচিত । প্রায় ৯/১০ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে অসংখ্য প্রাচীন কীর্তির মধ্যে মৃৎপাত্রের ভগনাংশ খোদাই করা শীলালিপি বিশাল গ্রানাইট পাথরের খন্ডাংশ পাথরের জন্যই সম্ভবতঃ এলাকাটি পাথরঘাটা বলে পরিচিত। পাথরঘাটার মূল কেমেদ্রর মাত্র ২০০ গজ উত্তরে প্রাচীনকালের চারপাড় বাধাঁনো একটি অগভীর জলাশয় আজো কালের সাক্ষী হয়ে আছে । ভগন পাড়গুলির প্রাচীন ইটগুলো দেখে তা সহজে বোঝা যায় । পুকুরের পূর্বদিকে পাল আমলে খ্রীস্টান মিশনারীজগণ অত্যাধুনিক একাধিক ভবন নির্মাণ করে সহানটির মান অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছেন । ভবনগুলি নির্মাণকালে খননের সময় অসংখ্য পুরাকীর্তির ভগনাবশেষ বের হয়েছে যা সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে । তুলশীগংগা নদীর উচু পাড় হতে প্রায় ১৮ ফুট নিচ পর্যন্ত পাথর দিয়ে বাঁধানো সিড়ি ও প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষের দৃশ্য চোখে পড়ার মত । অনুমান করা যায় তুলশীগংগা নদীর সৃষ্টির ফলে প্রাচীন এই বিশাল ইমারতগুলি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে । বর্তমানে খ্রীস্টান মিশনারীজ ভবনের মাত্র ৩০০ গজ দূরে একটি ঐতিহাসিক মাজার ও একটি মন্দির আছে । এলাকাবাসী এই মাজারকে পীর কেবলা নাসির উদ্দিনের মাজার ও হিন্দু সম্প্রদায় নিমাই পীরের দরগাঁ বলে দাবী করেন । বর্তমানে খ্রীস্টান মিশনের পশ্চিম দিকে একই সহানে ৯ ( নয়) টি পুকুর ছিল । আর এ জন্যই সহানটির নাম নওপুকুরিয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন । তবে বর্তমানে এখানে পুকুরের কোন অস্তিতব নেই । ধারণা করা হয় এই নওপুকুরিয়াতেই ঐতিহাসিক পাথরঘাটার প্রাচীন প্রশাসনিক/আবাসিক ভবন ছিল । পাল বংশীয় রাজা প্রথম মহীপাল ( ৯৮৮- ১০৮৩ ) এর নামানুসারে সহানটি মহীপুর হয়েছে বলে কিংবদন্তী চালু আছে ।

নিমাই পীরের মাজার

পাথরঘাটা নিমাই পীরের মাজারের পার্শ্বে একটি পাথরের দন্ড পোঁতা আছে । এটা পীর সাহেবের আশা বলে পরিচিত । একটি সিংহমুখাকৃতি কারুকার্য খচিত পাথরের উপর উপবেশন করে তিনি একতববাদের বাণী প্রচার করতেন । চৈত্র মাসের প্রথম সোমবারে এখানে মাযার জিয়ারত উপলক্ষে ইসালে সওয়াব এবং মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । ইসালে সওয়াবের কয়েক দিন পর এখানে স্মান উপলক্ষে হাজার হাজার হিন্দু নর-নারীর সমাবেশ ঘটে । এ উপলক্ষে এখানে এক বিরাট মেলা হয় । এটি পাথরঘাটার মেলা নামে পরিচিত । এখানে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত বহু পাথর পড়ে থাকতে দেখা যায় । বলা হয় যে, নিমাই পীরের আস্তানা হতে পাথরে বাঁধা একটি ঘাট ছিল। এই রাস্তায় তুলসী গংগা নদীর তীরে একটি পাথরের সেতু ছিল। সেতুটি বহু পূর্বে ভেঙ্গে গেছে । সেতুটি প্রায় ১৫০ ফুট দীর্ঘ ছিল । নদীর পূর্ব তীরে পাথর ও ইটের গাঁথুনি দেখা যায় । অনেকে সেতুটির খিলান বলে মনে করেন।পীর সাহেব উপসিহত ভদ্রমন্ডলীকে একখন্ড করে পাথর বসে দিতেন । প্রবাদ আছে, পীর সাহেব পাথরগুলি অলৌকিক উপায়ে নদীপথে এখানে এনেছিলেন । বহুদূর বিস্তৃত পাথরের এই ধ্বংশাবশেষের জন্য পাথরঘাটা নামকরণ সার্থক হয়েছে ।

পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি

পাগলাদেওয়ান বধ্যভূমিটি জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৫ কিঃমিঃ দূরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকবরকত ইউনিয়নের পাগলা দেওয়ান গ্রামে অবসিহত । ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেমবর তৎকালীন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের প্ররোচনায় কোনরকম উস্কানী ছাড়াই পাক সেনারা ১২২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল । উক্ত সহানে গণপূর্ত বিভাগের তত্তবাবধানে একটি স্মৃতিশৌধ নির্মাণ করা হয়েছে ।

বারশিবালয় মন্দির 

জয়পুরহাট সদর থেকে তিন মাইল উত্তর পশ্চিমে ছোট যমুনার তীরে বেল-আমলা গ্রাম অবসিহত । এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা নিভৃত সহানে বারটি শিবমন্দির রয়েছে । মন্দিরগুলি কোন যুগে এবং কার দ্বারা তৈরি তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মন্দিরের গঠন প্রণালী ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত দেখে মনে হয় এগুলি সেন যুগে তৈরি। কারণ সেন রাজা বল্লভ সেন ছিলেন শিবের উপাসক তথা শৈব । এতদঞ্চলে সেন রাজাদের কিছু কীর্তি রয়েছে। যেমন পাঁচবিবির লখমা ও পাথরঘাটা । এর থেকে ধরে নেয়া যায় রাজা বল্লাল সেন শিব উপাসনার জন্য এখানে এসব মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন।

গোপীনাথপুর মন্দির

 

জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলা সদর হতে মাত্র ৬/৭ কিঃ মিঃ পূর্বে গোপীনাথপুরে একটি অতি প্রাচীন মন্দির রয়েছে । এটি গোপীনাথ ঠাকুরের মন্দির নামের পরিচিত । যতদুর জানা যায় আজ হতে পাঁচশত বছর পূর্বে ভারতের নদীয়া জেলার শান্তিপুর ছিল শিক্ষা-দীক্ষায় খুব নামকরা সহান । শান্তিপুরে প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামী সবসময় ঈশ্বরের ধ্যান করতেন । তার সত্রী সীতা দেবীও ছিলেন সতী-সাধ্বী নারী । এ সময় ২৪ পরগণার যুবক নন্দ কুমার এবং নদীয়া জেলার আর এক যুবক যজ্ঞেশ্বর রায় প্রভুপাদ অদ্বৈত গোস্বামীর নিকটে এসে দীক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে অদ্বৈত গোস্বামী মহোদয় তাদের সব কথা শুনে সীতাদেবীর কাছে পাঠান । সীতাদেবী ধ্যান যোগে জানতে পারেন যে, এই যুবকেরা পূর্ব জম্মে জয়া ও বিজয়া নামে দুই সখী ছিলেন । তখন সীতাদেবী যুবকদের মাথা ন্যাড়া করে স্মান করে আসতে বলেন ।সীতাদেবীর নির্দেশ মত কাজ শেষ করে এলে তিনি তাদের দীক্ষা দিলেন । তারা কৃষ্ণমমেত্র দীক্ষা নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা আরম্ভ করেন । সীতাদেবী নন্দকুমারের নাম নন্দিনী এবং যজ্ঞেশ্বরের নাম জংগলী রাখলেন । নন্দিনী প্রিয়া বরেন্দ্র এলাকায় বর্তমান জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের ১কিঃমিঃ উত্তরে গভীর জংগলে নদীর ধারে একটি মন্দির সহাপন করেন। জনশ্রতি আছে যে, ১৫২০ হতে ১৫৩০ খ্রিষ্ট্রাবে্দর মধ্যে বাংলার সুলতান আলাউদ্দীন হুসেন শাহ নন্দিনী প্রিয়ার পূজা পার্বনে এবং অতিথি সেবার কথা শুনে খুশি হন এবং তাম্রফলকে লিখে পূর্ণগোপীনাথপুর ও গোপালপুর মৌজার সব সম্পত্তি দেবোত্তর হিসেবে প্রদান করেন। পূর্ণ গোপীনাথপুর মন্দিরটি নির্মিত হয় । পাল যুগের নির্মাণ কৌশলের সাথে এ মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত হয় । পাল যুগের নির্মাণ কৌশলের সাথে এ মন্দিরটির কাঠামো নির্মিত হয় । ১৩০৪ বাংলা সালে এক ভূমিকম্পে এ মন্দিরটি ভেংগে পড়ে । ১৯২৮ হতে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্তমান মুল মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করা হয় । এখনও পুরাতন কারুকার্যের কিছু নমুনা মুল ভবনে রয়েছে । মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুট এবং এর নির্মাণ ব্যয় ১লাখ টাকা হয়েছিল । প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আরতি এবং মধ্যাহ্নে আধামণ (২০কেজি) চালের অন্নভোগ দেওয়া হয় । প্রতিবছর দোল পূর্ণিমাতে এখানে মেলা বসে এবং ১৩দিন ধরে এ মেলা চলে । পূর্বে এক মাস ধরে মেলা হত । ছায়াঘন সবুজে ঘেরা অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন এলাকাটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে । দুর দুরান্ত থেকে ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসু ব্যক্তিবর্গ এখানে প্রতিনিয়ত আগমন করেন । তাই পিকনিক স্পট হিসেবেও সহানটি খ্যাতি লাভ করেছে । প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গোপীনাথপুরের এই মন্দির ও তৎপার্শ্ববর্তী এলাকা ঘিরে বার্ষিক মেলায় মৃৎশিল্প,হসতশিল্প,কারুপণ্যসহ নানারকম তৈজসপত্রের কেনা-বেচা অনেক দিন ধরে চলে আসছে ।

তথ্যসূত্র : http://touristguide24.com